শরীরে হরমোন এর পরিবর্তনের কারণে অনেক নারী মাথাব্যথার শিকার হন।
অনেকে মাইগ্রেন (এক প্রকার মাথাব্যথা) এর সাথে তাদের মাসিক বা রজঃস্রাবের একটি সম্পর্ক লক্ষ্য করেন। মাসিকের সময়কালীন এই মাথাব্যথা প্রায়ই বেশ গুরুতর রূপ ধারন করে। মাসিক শুরু হওয়ার ২ দিন আগে অথবা মাসিকের প্রথম ৩ দিনে এই মাথাব্যথার সূত্রপাত ঘটতে পারে। নারীর শরীরে এই সময়টাতে এস্ট্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে এই মাথাব্যথা আরম্ভ হয়। মাসের অন্যান্য সময়ে হয়ে থাকা মাইগ্রেনের তুলনায় এই সময়কার মাইগ্রেন সাধারণত বেশি দুঃসহ হয় এবং এই ব্যথা পরের দিন ফিরে আসার সম্ভাবনাও বেশি।
মাসিক ছাড়াও অন্যান্য কারণে এই প্রকার হরমোনজনিত মাথাব্যথা হতে পারে। কারণগুলো হলো:
- জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি (কম্বাইন্ড ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল) – এই বড়ি খাওয়ার ফলে কারো কারো মাথাব্যথা কমে যায়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে আগের তুলনায় আরো ঘনঘন মাথাব্যথা হয়। বিশেষ করে যে সপ্তাহে তারা পিল বা বড়ি খাওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং এস্ট্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ কমে যায়।
- রজোবন্ধ বা মেনোপজ- রজোবন্ধের সময় যত ঘনিয়ে আসে, মাথাব্যথা ততই যন্ত্রণাদায়ক হতে থাকে। এমন হওয়ার পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। এক, রজোবন্ধের আগের সময়টায় মাসিক আরো ঘনঘন হয়। দুই, এই সময়ে নারীর শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়।
- গর্ভাবস্থা – সন্তান গর্ভে ধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহে মাথাব্যথা তীব্র হয়ে উঠে। এই ব্যথা সাধারণত গর্ভাবস্থার শেষের ৬ মাসে কমে আসে অথবা একদমই চলে যায় । আর এই মাথাব্যথা বাচ্চার কোন ক্ষতি করে না।
পরিসংখ্যান
আপনার মাথাব্যথা হরমোনজনিত সমস্যার কারণে হচ্ছে কিনা কিভাবে জানবেন
মাসিকের সাথে আপনার মাথাব্যথার আদৌ সম্পর্ক আছে কি না, এই ব্যাপারে জানতে কমপক্ষে ৩ মাস একটি ডায়েরিতে মাসিক চক্র এবং মাথাব্যাথার সকল তথ্য লিখে রাখুন। যদি আপনার মাথাব্যথার সাথে সত্যিই মাসিকের সম্পর্ক থাকে, তাহলে ডায়েরির মাধ্যমে জানা যাবে যে মাসিক চক্রের ঠিক কোন পর্যায়ে মাথাব্যথার সূত্রপাত ঘটেছে ।
এই মাথাব্যথা মোকাবেলায় আপনি নিজে যা করতে পারেন
ডায়েরির মাধ্যমে যদি জানতে পারেন যে মাসিক শুরু হবার ঠিক আগে আপনার মাথাব্যথা হয়, তাহলে আপনি এই কাজ গুলো করতে পারেন:
- ঘনঘন অল্প পরিমাণে কিছু খেতে থাকবেন যাতে আপনার রক্তে শর্করা ভালো পরিমাণে থাকে। এক বেলা খাবার না খেলে বা অনিয়মিত খেলে মাথাব্যথা হতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে হাল্কা কিছু খাবেন এবং অবশ্যই সকালের নাস্তা করবেন।
- নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমের পরিমাণ খুব বেশি বা খুব অল্প যাতে না হয়।
- মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন। তা যদি সম্ভব না হয়, মানসিক চাপ মোকাবেলার কিছু উপায় অবলম্বন করুন, যেমন নিয়মিত ব্যায়াম।
হরমোনজনিত মাথাব্যথার চিকিৎসা
মাইগ্রেনের চিকিৎসা: মাসিকের সময় মাইগ্রেনের জন্য ডাক্তার আপনাকে কিছু ওষুধ দিতে পারেন । এসব ওষুধে হরমোন না থাকলেও এগুলো মাইগ্রেন ঠেকাতে পারে। যেমন ট্রিপট্যান, মেফেনামিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
কোন বিরতি ছাড়া জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি: যদি মনে হয় জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি নেওয়ার সাথে আপনার মাথাব্যথার সম্পর্ক আছে, তাহলে ডাক্তারকে জানাবেন।
যে সপ্তাহে আপনি বড়ি খাওয়া থেকে বিরত থাকেন, সেই সময়ে যদি মাথাব্যথা হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে কোন বিরতি ছাড়া কয়েক পাতা বড়ি খেতে পারেন। তখন আপনার শরীরে এস্ট্রোজেনের পরিমাণ হঠাৎ করে কমে যাবে না।
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি: মেনোপজ ঘনিয়ে আসার সময় নারীর শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়, যার ফলে মাইগ্রেন সহ নানান ধরনের মাথাব্যথার উপদ্রব বেড়ে যায়।
হট ফ্লাশ (হঠাত করে চরম তাপ অনুভব করা যা সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়), অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি কমিয়ে ফেলতে সহায়তা করতে পারে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি।
তবে আপনি যদি মাইগ্রেনে ভোগেন, ট্যাবলেটের তুলনায় আপনার জন্য প্যাচ অথবা জেল হিসেবে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেয়া শ্রেয়। ট্যাবলেটের তুলনায় এগুলো হরমোনের পরিমাণ অধিক স্থিতিশীল রাখে এবং মাইগ্রেন শুরু করে কম।
এস্ট্রোজেন থেরাপি: আপনার মাসিক যদি নিয়মিত হয়, ডাক্তার আপনাকে মাসিক শুরু হওয়ার আগের কিছু দিন এবং মাসিক চলাকালীন কিছু দিন ব্যবহারের জন্য এস্ট্রোজেন প্যাচ বা জেল দিতে পারেন। তবে এগুলো সাধারণত মাসিকের সময়কার মাইগ্রেনের জন্য দেয়া হয় না।
কেন মাথাব্যথা হয়?
মাথাব্যথা দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিবছর শতকরা প্রায় ২০ জন শিশু ও কিশোর মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়। দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার প্রভৃতি কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে।
মাথাব্যথা প্রধানত দুই প্রকার
- প্রাইমারি হেডেক:- যেমন: মাইগ্রেন, টেনশন টাইপ হেডেক, ক্লাস্টার হেডেক ইত্যাদি ।
- সেকেন্ডারি হেডেক:- যেমন সাইনোসাইটিস, মাসটয়ডাইটিস, গ্লুকোমার, স্ট্রোক, মাথার আঘাতজনিত, মস্তিষ্কের টিউমার ইত্যাদি।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
মাথাব্যথার ধরন বা কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। এ জন্য প্রথমে প্রয়োজন রোগ নির্ণয় করা।
মাইগ্রেন থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু উপায়:
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত।
- অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
- কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে।উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
- বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।
- মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।
যেসব খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে:
- ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেম: ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।
- বিভিন্ন ফল বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
- সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়।
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
- আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিঞ্জার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন:
- চা, কফি ও কোমলপানীয়
- চকলেট, আইসক্রিম, দই, ডেইরি প্রোডাক্ট (দুধ, মাখন)
- টমেটো ও সাইট্রাস জাতীয় ফল খাবেন না
- গমজাতীয় খাবার, যেমন: রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি
- আপেল, কলা ও চিনাবাদাম
যা খেয়াল রাখবেন
তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় একটা ডায়েরি রাখা। যাতে আপনি নোট করে রাখতে পারেন কোন কোন খাবার ও কোন কোন পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছে। এ রকম এক সপ্তাহ নোট করলে আপনি নিজেই নিজের সমাধান পেয়ে যাবেন। তবে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সাইনোসাইটিসের কারণে মাথাব্যথা
যাদের ঘন ঘন সর্দি-কাশি হয়, তাদের সাইনোসাইটিস থেকে এ ধরনের মাথাব্যথা হয়। তখন গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। এভাবে কিছুটা আরাম পাবেন, নাকের বন্ধ ভাবটাও কাটবে বেশ। নাক পরিষ্কার করতে হবে খুব ভালোভাবে। তবে ঘরের চিকিৎসায় কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ খেতে হতে পারে। যাঁদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জি আছে, তাঁরা ধুলার সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকুন। যে কেউ যখনই সর্দির সমস্যায় আক্রান্ত হোন, সব সময় খেয়াল রাখুন যেন নাক সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয়। সাইনোসাইটিসের ব্যথার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। আলো বা শব্দের কারণে এ ব্যথা বাড়ার কোনো কারণ নেই।
চক্ষুজনিত মাথাব্যথা
শতকরা ৫ ভাগ মাথাব্যথা চক্ষুজনিত। চোখের দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে মাথাব্যথা হতে পারে। অনেকক্ষণ পড়াশোনা করা, সেলাই করা, সিনেমা দেখা বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে মাথাব্যথা হতে পারে। চোখের কোনো রোগের কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। চক্ষুজনিত মাথাব্যথা সাধারণত চোখে, কপালের দুদিকে বা মাথার পেছনে হয়ে থাকে | চক্ষুজনিত মাথাব্যথায় বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
হরমোনজনিত মাথাব্যথা
মেয়েদের ঋতুচক্রের সময়ে হরমোনের ওঠানামার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ খেলেও এমনটা হতে পারে।
ঘরোয়া উপায়ে মাথাব্যথা দূর করার উপায়
পানি পান করা: পানিশূন্যতার কারণে অনেক সময় মাথাব্যথা হতে পারে। তাই মাথাব্যথা অনুভূত হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি তাজা ফলের রস ও পানিসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
সময়মতো খাবার খান: সঠিক সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার যাঁরা খেয়ে থাকেন তাঁদের অযথা মাথাব্যথা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। নিয়মমাফিক কাজ চালানোর জন্য মস্তিষ্কের গ্লুকোজ প্রয়োজন হয় আর সময়মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি মস্তিষ্কে সরবরাহ না হলে মাথাব্যথা হয়।
পর্যাপ্ত ঘুম: একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। যদি ঘুমের সমস্যা হয় এবং পর্যাপ্ত সময় ঘুম না হয় তখন মাথাব্যথা হতে পারে
বিশ্রাম করুন: কাজের ফাঁকে চোখ বন্ধ করে কিছু সময় বিশ্রাম করা উচিত। ঘরের আলো কমিয়ে চেয়ার বা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বা শুয়ে কিছু সময় বিশ্রাম নিলে মাথাব্যথা কমে আসবে।
গরম পানি দিয়ে গোসল: মাথাব্যথা হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আরাম পাওয়া যাবে। মাথায়, ঘাড়ে ও কাঁধে কুসুম গরম পানি ঢাললে মাথা ও ঘাড়ের পেশিগুলো শীতল হয় এবং মাথাব্যথা কমে আসে।
হাসুন: হালকা মাথাব্যথা উপশমে হাসি বেশ উপকারী। হাসলে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টিকারী হরমোন এন্ড্রোফিন হরমোন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এন্ড্রোফিন মাথাব্যথা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
প্রাণভরে শ্বাস নিন: বুক ভরে শ্বাস নিলে তা ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। বিশুদ্ধ বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিলে তা প্রাকৃতিকভাবে মাথাব্যথা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
অবসাদ থেকে ছুটি নিন: যে পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হবে সেখান থেকে সরে যান। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে খোলা কোনো জায়গা থেকে হেঁটে আসতে পারেন অথবা মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবে এমন কিছু করতে পারেন।
হরমোনজনিত মাথাব্যথার কারণগুলি
মাথাব্যাথা, বিশেষত মাইগ্রেনের মাথাব্যাথা মহিলাদের হরমোন ইস্ট্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়েছে। এস্ট্রোজেন মস্তিষ্কের এমন রাসায়নিকগুলি নিয়ন্ত্রণ করে যা ব্যথার সংবেদনকে প্রভাবিত করে। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা হ্রাস মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে। বিভিন্ন কারণে হরমোনের মাত্রা পরিবর্তিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
ঋতুস্রাব : এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা ঋতুস্রাবের ঠিক আগে তাদের সর্বনিম্ন স্তরে চলে যায়।
গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় এস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় । অনেক মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাথা ব্যথা চলে যায়। তবে কিছু মহিলা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে তাদের প্রথম মাইগ্রেনের অভিজ্ঞতা পান এবং তারপরে প্রথম ত্রৈমাসিকের পরে স্বস্তি পান। জন্ম দেওয়ার পরে, এস্ট্রোজেনের মাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়
পেরিমেনোপজ এবং মেনোপজ: পেরিমেনোপজে হরমন স্তরের ওঠানামা (যে বছরগুলি মেনোপজের দিকে নিয়ে যায়) কিছু মহিলার বেশি মাথা ব্যথার কারণ হয়। মাইগ্রেনের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মহিলারা বলেছেন যে মেনোপজে পৌঁছে তাদের লক্ষণগুলি উন্নত হয়। কারও কারও কাছে মাইগ্রেনগুলি আরও খারাপ হয়। এটি হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির ব্যবহারের কারণে হতে পারে
মৌখিক গর্ভনিরোধক এবং হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি: জন্ম নিয়ন্ত্রণের পিলস এবং হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি এবং পতনের কারণ হতে পারে। যেসব মহিলার মাইগ্রেনগুলি বড়িতে থাকা অবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে আসে সাধারণত চক্রের শেষ সপ্তাহে মাইগ্রেনের আক্রমণ হয়, যখন বড়িগুলিতে হরমোন থাকে না।
অন্যান্য অবদানকারী কারণগুলি
জেনেটিক্স দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেনগুলিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হয়। মাইগ্রেন রয়েছে এমন লোকদের মাথা ব্যাথার কারণগুলির সাথে সংমিশ্রণের ঝোঁক থাকে। হরমোন ছাড়াও, এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- খাবার বাদ দেওয়া
- খুব বেশি বা খুব কম ঘুমানো
- তীব্র আলো, শব্দ বা গন্ধ li>
- মারাত্মক আবহাওয়ার পরিবর্তন
- অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়, বিশেষত লাল ওয়াইন
- অত্যধিক ক্যাফিন বা ক্যাফিন প্রত্যাহার
- চাপ
- প্রক্রিয়াজাত মাংস, শক্ত সসেজ এবং ধূমপানযুক্ত মাছ
- মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি), একটি স্বাদ বৃদ্ধিকারী
- বয়স্ক পনির
- সয়া পণ্য
- কৃত্রিম মিষ্টি
- হরমোনজনিত মাথা ব্যথার লক্ষণগুলি
- হরমোনজনিত মাথাব্যথার প্রধান বৈশিষ্ট্য হ’ল মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেন। তবুও, অনেক মহিলা অন্যান্য লক্ষণগুলি অনুভব করেন যা ডাক্তারদের হরমোনজনিত মাথাব্যথার সাথে সনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে।
- ঋতুস্রাবের বা হরমোনীয় মাইগ্রেনগুলি নিয়মিত মাইগ্রেনের সমান এবং অরুর আগে বা নাও হতে পারে। মাইগ্রেন হ’ল এক মাথা ব্যথা যা মাথার একপাশে শুরু হয়। এটি হালকা এবং বমি বমি ভাব বা বমি বমিভাব প্রতি সংবেদনশীলতা জড়িত থাকতে পারে।
হরমোনজনিত মাথাব্যথার অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
-
-
- ক্ষুধা হ্রাস
- ক্লান্তি
- ব্রণ
- জয়েন্টে ব্যথা
- প্রস্রাব হ্রাস
- সমন্বয়ের অভাব
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- জন্য বাসনা অ্যালকোহল, নুন, বা চকোলেট
-
হরমোনজনিত মাথা ব্যথার জন্য চিকিত্সা
ঘরোয়া প্রতিকার
- আপনি আপনার মাথাব্যথার চিকিত্সা শুরু করার আগে যতটা সম্ভব আপনার সম্ভাবনা তত বেশি ত্রাণ হয়। এই পদ্ধতিগুলি সাহায্য করতে পারে:
-
- হাইড্রেটেড থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন
- একটি অন্ধকার, শান্ত ঘরে শুয়ে থাকুন
- একটি আইস ব্যাগ রাখুন বা আপনার মাথায় ঠান্ডা কাপড়।
- যেখানে ব্যথা অনুভূত হয় সেই অঞ্চলে ম্যাসেজ করুন
- গভীর শ্বাস প্রশ্বাস বা অন্যান্য শিথিল অনুশীলন সম্পাদন করুন
-
- বায়োফিডব্যাক মাথাব্যথার ফ্রিকোয়েন্সি বা ব্যথা কমাতে আপনাকে নির্দিষ্ট পেশী শিথিল করতে শিখতে সহায়তা করে। আপনার ডাক্তার সুপারিশ করতে পারেন আপনি ম্যাগনেসিয়াম পরিপূরক গ্রহণ করুন, যা মাথা ব্যথার তীব্রতা হ্রাস করতে সহায়তা করে। আপনার জীবনে স্ট্রেস হ্রাস মাথা ব্যাথা বা মাইগ্রেনের আক্রমণ প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করতে পারে। অতিরিক্ত চিকিত্সার মধ্যে আকুপাংচার এবং ম্যাসেজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে
-
- ওভার-দ্য কাউন্টার কাউন্টার ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি medicষধগুলি (এনএসএআইডি), যেমন আইবুপ্রোফেন
- ট্রিপট্যানস, যা মাইগ্রেন-নির্দিষ্ট ationsষধগুলি যা তীব্রতা হ্রাস করতে পারে মাইগ্রেনের আক্রমণ
-
- যে মহিলারা ঘন ঘন হরমোনজনিত মাথাব্যাথা অনুভব করেন তাদের জন্য প্রতিরোধমূলক থেরাপি এবং ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ওষুধগুলি আপনার চক্রের সময়ের আগে বা প্রতিদিন নেওয়া যেতে পারে যখন আপনি জানেন যে আপনি হরমোনজনিত মাথাব্যথার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি most এই ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:
-
- বিটা ব্লকার
- অ্যান্টিক্যালভাল্যান্টস
- ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার
- প্রতিরোধী
-
- হরমোন থেরাপি
- যদি প্রতিষেধক .ষধগুলি ব্যর্থ হয় তবে আপনার ডাক্তার আপনাকে হরমোন থেরাপির পরামর্শ দিতে পারে। আপনাকে বড়ি বা পিচের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন গ্রহণের জন্য এস্ট্রোজেন দেওয়া যেতে পারে
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলগুলি সাধারণত হরমোনকে এমনকি আক্রান্ত করতে এবং হরমোনজনিত মাথাব্যথা হ্রাস করতে ব্যবহৃত হয়। আপনি যদি হরমোনজনিত গর্ভনিরোধক কোনও রূপ নিচ্ছেন এবং হরমোনজনিত মাথাব্যথার অভিজ্ঞতা পান তবে আপনার ডাক্তার আপনার ডোজ পরিবর্তন করতে পারেন। সমস্যার উপর নির্ভর করে, আপনার ডাক্তার আপনার লক্ষণগুলি হ্রাস করতে ইস্ট্রোজেনের একটি কম ডোজ সহ কোনও medicationষধে আপনাকে স্যুইচ করতে পারেন।
- কিছু মহিলার ক্ষেত্রে চিকিত্সকরা পরবর্তী জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্যাকটি তাড়াতাড়ি শুরু করার পরামর্শ দেন। তার মানে প্যাকটির শেষ সপ্তাহে হরমোন-মুক্ত প্লাসবো বড়িগুলি এড়িয়ে যাওয়া। চিকিত্সকরা সাধারণত একবারে তিন থেকে ছয় মাস এটি পরামর্শ দেন যা আক্রমণগুলির ফ্রিকোয়েন্সি হ্রাস করতে পারে।
- আপনি যখন গর্ভবতী হন বা বুকের দুধ খাওয়ান
- আপনি যদি গর্ভবতী হওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে ভাববেন আপনি গর্ভবতী হতে পারেন, বা বুকের দুধ খাচ্ছেন, আপনার সমস্ত ationsষধগুলি ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন। কিছু মাথাব্যথার ওষুধগুলি আপনার শিশুর বিকাশের ক্ষতি করতে পারে। আপনার ডাক্তার বিকল্প প্রস্তাব দিতে সক্ষম হতে পারেন
- পেরিমেনোপজ বা মেনোপজের সময়
- আপনি যদি হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির ওষুধ নেন এবং মাথা ব্যথার বৃদ্ধি পান তবে আপনার ডাক্তারকে আপনার ডোজটি সামঞ্জস্য করতে বলুন। একটি ইস্ট্রোজেন প্যাচ এস্ট্রোজেনের একটি কম, অবিচল ডোজ সরবরাহ করতে পারে যা মাথা ব্যথার ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা কমিয়ে আনতে পারে
- হরমোনজনিত মাথাব্যথা প্রতিরোধ করা
- আপনার নিয়মিত পিরিয়ড থাকলে আপনার ডাক্তার সুপারিশ করতে পারেন প্রতিরোধক ওষুধ। এটি আপনার পিরিয়ডের কয়েক দিন আগে শুরু হয়ে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। কিছু ক্ষেত্রে, প্রতিদিনের ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে
- আপনার struতুস্রাব, ডায়েট, ঘুম এবং ব্যায়ামের অভ্যাসগুলি অনুসরণ করতে একটি মাথা ব্যথার জার্নাল রাখুন। এটি সম্ভাব্য ট্রিগারগুলি সনাক্ত করতে সহায়তা করবে
- আপনি যদি মৌখিক গর্ভনিরোধক হন তবে আপনার চিকিত্সককে জিজ্ঞাসা করুন: আপনি কি করতে পারেন:
-
- একটি রেজিমিনে স্যুইচ করুন যাতে কম বা কোনও প্লাসবো দিন অন্তর্ভুক্ত নেই
- কম এস্ট্রোজেন ডোজ সহ বড়িগুলি নিন
- প্লাসবো দিনের জায়গায় কম-ডোজ এস্ট্রোজেন বড়ি নিন
- প্লাসিবো দিনে একটি ইস্ট্রোজেন প্যাচ পরুন
- প্রজেস্টেইন-একমাত্র জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িগুলিতে স্যুইচ করুন
-
- আপনি যদি বর্তমানে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণ না করেন তবে আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন যে সেগুলি গ্রহণ করলে আপনার হরমোনজনিত মাথাব্যথা হ্রাস পেতে পারে
- জটিলতা এবং জরুরী লক্ষণসমূহ
- যে সমস্ত ব্যক্তিরা সাধারণত মাইগ্রেনের অভিজ্ঞতা পান তাদের মধ্যে অনেক বেশি অভিজ্ঞ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে:
-
- হতাশা
- উদ্বেগ
- ঘুমের ব্যাঘাত
-
- ঘন ঘন হরমোনজনিত মাথাব্যথা বা menতুস্রাবের মাইগ্রেনযুক্ত মহিলারা এই জটিলতাগুলির মতোই সংবেদনশীল।
- মৌখিক গর্ভনিরোধক এবং ইস্ট্রোজেন গ্রহণ করা অনেক মহিলার পক্ষে নিরাপদ তবে তারা স্ট্রোক এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির সাথেও কিছুটা যুক্ত associated উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাসে আক্রান্ত মহিলারা বিশেষত ঝুঁকির মধ্যে থাকেন
- বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা ও ন্যাচারোপ্যাথি ব্যবস্থাপনা
- মাথাব্যথার কারণ
– মাইগ্রেন
– হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ
– দুশ্চিন্তা
– সাইনোসাইটিস
– কোষ্ঠবদ্ধতা
– ডিহাইড্রেশন/পানিশূন্যতা
– ক্লান্তি এবং অবসাদ
– ক্ষুধা লাগলে
– জ্বর
– চোখের সমস্যা
– অতিরিক্ত পরিশ্রম
– হতাশা, বিষন্নতা
– ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণজনিত কারণে
– হরমোনজনিত সমস্যায়
– গর্ভাবস্থায়
– মাথায় আঘাত লাগা
– ব্রেন টিউমার ইত্যাদি
মাথাব্যথার ধরন এবং লক্ষণ
মাইগ্রেন
মাইগ্রেনের ব্যথা বোঝার উপায় হলো, এতে মাথার যেকোন একপাশে ব্যথা হবে এবং যে পাশে ব্যথা হবে সে পাশের চোখও ব্যথা করবে। তীব্র মাইগ্রেনের ব্যথায় বমি ভাব বা বমি হতে পারে। দীর্ঘদিনের মাইগ্রেনের রোগি ব্যথা শুরু হওয়ার আগে চোখে আলোর ঝলকানি দেখে বা কোন শব্দ শুনতে পায়, কারো কারো হাত পায়ে কুটকুট করে। এগুলো নিওরোলজিক্যাল সিম্পটম। মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে কতগুলো বিষয় জড়িত চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যেগুলোকে ট্রিগার বলা হয়। যেমন, কোন বিশেষ খাবার, অতিরিক্ত শব্দ, তীব্র লাইটের আলো, কোন বিশেষ গন্ধ বা ঘ্রাণ, ক্ষুধা লাগা, এলার্জি, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত কাজের চাপ, হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন, ঋতুস্রাব, ইত্যাদির প্রভাবে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়। এই ব্যথা ১-৭ দিন এমনকি ১৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ি হতে পারে।
হাইপারটেনশন
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপে মাথার পিছনে ঘাড়সহ তীব্র ব্যথা হয়। এই অবস্থায় রোগি চোখে ঝাপসা দেখে, কথা জড়িয়ে যেতে পারে। ব্লাডপ্রেসার বেড়ে গেলে এবং দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ থেকে এ ধরনের মাথাব্যথা হয়।
দুুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস
কোন কারণে কেউ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে মাথাব্যথা শুরু হতে পারে। যেমন, পরীক্ষার চাপ, পারিবারিক কোন ঘটনা, ইত্যাদি। এই ধরনের ব্যথা মাথার পেছনেসহ কপালের চারপাশে হয়।
সাইনোসাইটিস
এতে নাকের চারপাশসহ চোয়াল, চোখ এবং দুই ভ্রুর মাঝামাঝি তীব্র ব্যথা হয়। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নাসাল ক্যাভিটির প্রদাহ থেকে এই ব্যথা হয়।
ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা
দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে, ডায়রিয়া, অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে গেলে মাথাব্যথা শুরু হয়। এ ধরনের ব্যথা মাথার এক পাশে, পিছনে বা পুরো মাথাজুড়ে শুরু হতে পারে। ব্যথার পাশাপাশি তীব্র পানির পিপাসা, অল্প এবং গাঢ় রঙের প্রস্রাব বিশেষ লক্ষণ।
কোষ্ঠবদ্ধতা
যাদের নিয়মিত পেট পরিষ্কার হয়না তারাও মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন। কোষ্ঠবদ্ধতার রোগিরা মাথাব্যথার পাশাপাশি পেট ভার হয়ে থাকা, পায়ুপথে ঘনঘন বায়ু বের হওয়া, ক্লান্তি এবং অবসাদে ভোগেন।
হরমোনজনিত সমস্যায় মাথাব্যথা
যাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা রয়েছে তারাও মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন। যেমন, মাসিকের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোন লেভেল ওঠানামার কারণে এই ব্যথা হয়। মাসিক ভালো হয়ে গেলে ব্যথা আর থাকে না। অনেকের আবার প্রেগন্যান্সির সময়েও হরমোনের আধিক্যের কারণে মাথাব্যথা হয়।
ক্লাস্টার হেডেক
এ ধরনের মাথাব্যথা সাধারণত ঘুমাতে যাবার ১ থেকে ২ ঘন্টা পর শুরু হয়। মাথার এক পাশে চোখসহ তীব্র ব্যথা শুরু হয়ে মুখ, ঘাড় এবং পুরো মাথায় ছড়াতে পারে। ব্যথা ১৫ মিনিট থেকে ৩ ঘন্টা এমনকি সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত স্থায়ি হতে পারে। ব্যথার সময় আক্রান্ত চোখ লাল হয়ে ফুলে যায় এবং চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে, মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ব্যথার পাশের নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে। এ ধরনের ব্যথা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হয় যেমন, শীতের শুরুতে বা গরমে। এই ধরনের ব্যথার কারণ হিসেবে শরীরের জৈব ঘড়ি হাইপোথ্যালামাসের ত্র্রুুটিকে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও ব্রেন টিউমার, কিছু ওষুধেরে প্রভাব, কোন জটিল অসুখ থেকেও ক্লাস্টার হেডেক হতে পারে।
মাথাব্যথা প্রতিকার এবং নিরাময়ে ন্যাচারোপ্যাথি ব্যবস্থাপনা
মাথাব্যথার যন্ত্রণা থেকে প্রতিকার এবং নিরাময়ে ন্যাচারোপ্যাথিতে রয়েছে কার্যকরি কিছু পদ্ধতি। তবে চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে হবে। অর্থ্যাৎ, মাথাব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করে সে অনুযায়ী থেরাপির পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজন হলে রোগ নির্ণয়ের জন্য MRI, CT Scan করতে হবে। কারণ, অনেক সময়ই মাথাব্যথা হতে পারে জটিল কোন রোগের লক্ষণ। এসব ক্ষেত্রে ব্যথা কমানোর পাশাপাশি মূল রোগের চিকিৎসা করাতে হয়। লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং থেরাপির মাধ্যমে মাইগ্রেন, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠবদ্ধতা ইত্যাদির কারণে যে মাথাব্যথা হয় তা সহজে সেরে যায়।
ন্যাচারোপ্যাথি ব্যবস্থাপনা গুলি হলো :-
১. আকুপাংচার
তাৎক্ষনিক মাথাব্যথা কমাতে যাদুকরি আকুপাংচার পয়েন্ট হলো Hegu (LI-4), Baihui (DU-20), Sishencong (Ex-6), Shaochong (H-9). যাদের Needle Phobia রয়েছে অর্থ্যাৎ সূঁচ ফোটাতে ভয় পায় তারা এসব পয়েন্টে আকুপ্রেসার করলেও মাথাব্যথা কমে যাবে।
২. রিফ্লেক্সোলজি
হাতের এবং পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে মস্তিষ্ক সংক্রান্ত ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রয়েছে। তীব্র মাথাব্যথার সময় এসব পয়েন্টে একনাগাড়ে ২ মিনিট থেরাপি নিলে মাথাব্যথা কমে যায়। যারা পয়েন্টগুলো চেনেননা, তারা যদি শুধু হাতে-পায়ের সম্পূর্ণ বৃদ্ধাঙ্গুলে ২ মিনিট চেপে ধরে রাখেন, তাতেও ব্যথা ভালো হয়।
৩. যোগাসন
হস্তপদাসনা, সেতুবন্ধাসনা, শিশুআসনা, মারজারিআসনা, পশ্চিমোত্তাসনা, অধোমুখো শবাসনা, পদ্মাসনা, শবাসনা নিয়মিত করলে ব্যথা সেরে যায়।
৪. প্রাণায়াম
নিয়মিত ভ্রামরী প্রাণায়াম, অনুলম বিলম, কপালভাতি এবং ভ্রস্তিকা প্রাণায়াম করলে মাইগ্রেন সহ যেকোন মাথাব্যথা নিরাময় হয়। এছাড়াও Deep Relaxation Technique (DRT), Yoga Nidra এসব রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ মাথাব্যথা সারাতে খুবই উপকারি।
৫.মাসাজ
অ্যারোমা থেরাপি (Lavender or Peppermint Oil Massage), হেড মাসাজ, ফুট মাসাজ মাংসপেশিকে রিলাক্স করে রক্তনালী এবং নার্ভের উপর চাপ কমিয়ে মাথাব্যথা সারাতে সাহায্য করে।
৬. হাইড্রোথেরাপি
কপাল, মাথার পিছনে এবং মাথার যে অংশে ব্যথা হচ্ছে সেখানে ঠান্ডা-গরম পানির সেক দিলে ব্যথা কমে যায়। একে অল্টারনেটিভ হট এন্ড কোল্ড প্যাক বলে। এছাড়াও ১০ মিনিট হট ফুট বাথ নিলেও উপকার পাওয়া যায়।
৭. ক্রোমোথেরাপি বা রঙ চিকিৎসা
ব্যথার সময়ে ঘরের আলো নিভিয়ে ঘাড় আর মাথায় নীল আলোর রশ্মি ৫ থেকে ১০ মিনিট দিলে ব্যথার যন্ত্রণা কমে আরাম পাওয়া যায়।
৮. অক্সিজেন থেরাপি
বিশুদ্ধ অক্সিজেন ইনহেলেশন মানে শুদ্ধ বাতাস গ্রহণ মাথাব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাইগ্রেন এবং ক্লাস্টার হেডেক এর সময় মাথায় রক্তপ্রবাহ অনেক বেশি থাকে, অক্সিজেন ইনহেলেশন এই চাপ কমিয়ে আনে এবং ব্যথা কমায়।
৯. নিউট্রিশন এন্ড ডায়েট
আধা কাপ পালং শাকের রস এবং আধা কাপ গাজরের রস একসাথে মিশিয়ে সকালে খালিপেটে দুইমাস খেলে মাথাব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে। এছাড়াও ভিটামিন বি-২, বি-৬, ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম এবং কো এনজাইম কিউ ১০ (Coenzyme Q10) সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
১০. হারবাল উপায়ে
ক. হারবাল প্যাক
– ব্যথার সময় আদা বেটে বা বাঁধাকপি বেটে কপালে এবং মাথার দু’পাশে প্রলেপ লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখলে ব্যথা কমে।
– চন্দন এবং কর্পূরের গুড়ো পেস্ট করে কপালে প্রলেপ দিলেও ব্যথা কমে।
– তাৎক্ষনিক ব্যথা কমাতে আমলকি এবং হলুদের গুড়ো পানিতে গুলে এই প্যাক কপালে লাগালে ব্যথা কমে যায়।
– দুটো লেবু পাতা থেতলে হাতের তালুতে নিয়ে শুকলে তাৎক্ষনিক মাইগ্রেনের ব্যথা কমে।
খ. হারবাল পানীয়
– ক্যামোমাইল ফুলের পাউডার ১ চা চামচ এক কাপ পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে পান করলে সাথে সাথে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা সেরে যায়। এই পানীয় টানা ২ মাস খেলে মাইগ্রেনের ব্যথা ভালো হয়।
– আমলকি মাথাব্যথা সারাতে খুব উপকারি। প্রতিদিন আমলকি গুড়ো খেলে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।
– যে পাশে মাথাব্যথা হচ্ছে সে পাশের নাকে ৭ ফোঁটা খাঁটি সরষের তেল দিলে মাইগ্রেনের ব্যথা সেরে যায়। এভাবে দিনে দু’বার করে টানা ৫ দিন দিলে মাথাব্যথা ভালো হয়।
১১. আইসোলেসন এন্ড হাইড্রেটিং
মাইগ্রেনের মাথাব্যথা শুরু হলে থেরাপির পাশাপাশি কোলাহলবিহীন শান্ত নিরব রুমে, লাইট নিভিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। ঘুমানোর আগে পানীয় পান করে শুতে হবে যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে। এছাড়াও প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে এবং ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
মাথাব্যথা হলে যা করা যাবে না
– চা-কফি, সিগারেট, অ্যালকোহল, নেশাদ্রব্য, চকোলেট, ক্যান্ডি, ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, কোমল পানীয় এসব খাওয়া এবং পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
– রাত জেগে মোবাইল, কম্পিউটার চালানো যাবে না।
– যেহেতু রাগ, ক্ষোভ, দুশ্চিন্তা, হতাশা কোন বিষয়ের সমাধান দেয় না, তাই এসব এড়িয়ে চলতে হবে।
– মাথাব্যথার ট্রিগারগুলো জানতে হবে এবং সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
– রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
– অপ্রয়োজনীয় কথা, কাজে জড়ানো যাবে না।
মানুষের শরীর কম্পিউটার হলে মস্তিষ্ক হল তার সিপিইউ। সকল কাজ নিয়ন্ত্রিত হয় মাথা থেকে। মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে ইতিবাচক চিন্তার অভ্যাস, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের কোন বিকল্প নেই। ন্যাচারোপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রাকৃতিক উপায়ে ইতিবাচক জীবনশৈলীর দিক নির্দেশনা দেয় যার মাধ্যমে রােগ নিরাময়ের পাশাপাশি ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক কল্যাণ সাধিত হয়।
মাথাব্যথা সহজে দূর করবেন যেভাবে
মাথাব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাথাব্যথা আসলে কোনো রোগ নয় বরং একটি উপসর্গ মাত্র। ‘মাথা থাকলে মাথাব্যথা থাকবেই’- এটি জনসমাজে একটি বহুল প্রচলিত কথা। ছোট-বড় প্রায় সব বয়সী মানুষের মধ্যেই বিভিন্ন সময়ে এর প্রকোপ পরিলক্ষিত হয়। ঘনঘন মাথাব্যথা প্রাত্যহিক পারিবারিক ও কর্মজীবনকে বিষাদময় করে তুলতে পারে। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে যেসব কারণে মানুষের কার্যক্ষমতা এবং কর্মসময় নষ্ট হয়, তার একটি প্রধান কারণ এই মাথাব্যথা।
জীবনে কখনোই মাথাব্যথা হয়নি- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। বিশ্বব্যাপী ১৮-৬০ বছর বয়সী মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৬ শতাংশ ব্যক্তিই প্রতিবছর মাথাব্যথায় একবার না একবার আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যক্তিই টেনশন টাইপ মাথাব্যথা বা মাংসপেশীর সংকোচনজনিত মাথাব্যথা, ১১ শতাংশ ব্যক্তি মাইগ্রেন এবং ৩ শতাংশ ব্যক্তি ক্রোনিক ডেইলি হেডেক বা দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন। এ ছাড়া প্রতিবছর প্রায় ২০ শতাংশ শিশু-কিশোর নতুন করে বিভিন্ন ধরণের মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।
বিভিন্ন কারণেই মাথাব্যথা হতে পারে। মাথাব্যথার খুব সাধারণ কিছু কারণ হলো- ক্লান্তি, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, হতাশা, বিষণ্নতা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, দৃষ্টিক্ষীণতাসহ চোখের বিভিন্ন রোগ, নাইট্রোগ্লিসারিনসহ বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, জ্বর, সর্দি, সাইনোসাইটিস, মাথায় আঘাত, দাঁতের রোগ, খুবই ঠান্ডা কোনো পানীয় কিংবা কোনো খাবার খুব দ্রুত খেয়ে ফেলা, এমনকি দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকা, উচ্চ রক্তচাপ, হরমোনজনিত সমস্যা, গর্ভাবস্থা প্রভৃতি। কোমলপানীয়, অ্যালকোহল, কৃত্রিম শর্করা, কিয়র্ট মিট বা লবণ দিয়ে শুকানো মাংস, সয়াসস, পনির, চুইংগাম প্রভৃতি খাদ্যগ্রহণেও অনেকের মাথাব্যথা হতে দেখা যায়।
রোগের ইতিহাস, তীব্রতা, গতি-প্রকৃতি ও ধরনের ওপর ভিত্তি করে মাথাব্যথাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন- প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি। ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই মাথাব্যথার কারণ প্রাথমিক পর্যায়ের অর্থাৎ প্রাইমারি মাথাব্যথা। যে ধরনের মাথাব্যথায় চোখ বা মস্তিষ্কসহ শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে দৃশ্যত কোনো প্যাথোলজি থাকে না, তখন এ ধরনের মাথাব্যথাকে প্রাথমিক ব্যথা বলে চিহ্নিত করা হয়। মাইগ্রেন, টেনশন টাইপ হেডেক, ক্লাস্টার হেডেক, অক্সিপিটাল নিউরালজিয়া ইত্যাদি হলো প্রাথমিক পর্যায়ের মাথাব্যথা। প্রাথমিক ধরনের এ মাথাব্যথা আবার এপিসোডিক এবং ক্রোনিক- দুই ধরনের হতে পারে। এপিসোডিক ধরনের প্রাথমিক মাথাব্যথা সাধারণত আধা ঘণ্টা থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
অন্যদিকে ক্রোনিক ধরনের প্রাথমিক পর্যায়ের মাথাব্যথা মাসের অধিকাংশ দিনই উপস্থিত থাকে এবং একবার শুরু হলে একাধারে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আর সাইনোসাইটিস, সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস, ম্যাস্টয়ডাইটিস, গ্লুকোমা, স্ট্রোক, মাথায় আঘাতজনিত কারণে বা মস্তিস্কের টিউমারের জন্য মাথায় ব্যথা হওয়া, পোস্ট কনকাশন সিন্ড্রোম, মস্তিষ্ক আবরণীতে রক্তক্ষরণ প্রভৃতি হলো মাথাব্যথার বিভিন্ন ধরনের সেকেন্ডারি কারণ। অর্থাৎ চোখ, মুখমণ্ডল, গ্রীবাদেশীয় মেরুদণ্ড বা মস্তিষ্কের কোনো রোগ কিংবা এসব অঙ্গে কোনো ধরনের আঘাতের জন্য সেকেন্ডারি পর্যায়ে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। মাথাব্যথার এ বিভিন্ন রকমভেদের ওপর ব্যথার স্থায়িত্ব, তীব্রতা এবং প্রকৃতি অনেকাংশেই নির্ভর করে থাকে।
অনেক সময়ই মাথাব্যথার কারণের ওপর নির্ভর করে মাথাব্যথার সাথে সাথে আক্রান্ত ব্যক্তি বমিবমি ভাব কিংবা বমি, নাক বন্ধ থাকা, নাক দিয়ে পানি পড়া, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, অবসন্নতা ইত্যাদি বিভিন্ন উপসর্গে ভুগতে পারেন। তবে মাথাব্যথার পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির যদি ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, ত্বকে র্যাশ দেখা যায়, কথা জড়িয়ে যায়, শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪° ফারেনহাইটের বেশি হয়ে যায়, খিঁচুনি কিংবা তীব্র বমি হয়, আক্রান্ত ব্যক্তি যদি প্রলাপ বকেন বা অচেতন হয়ে পড়েন, শরীরের কোন অঙ্গ যদি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে ও দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়- তাহলে অবহেলা ও সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এগুলোকে মাথাব্যথার ‘রেড ফ্ল্যাগ সাইন’ হিসাবে অভিহিত করা হয়।
মাথাব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, এসপিরিন, টলফেনামিক এসিড প্রভৃতি বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। মাথাব্যথা উপশমে আদার জুড়ি নেই। কারণ আদায় প্রাকৃতিকভাবেই রয়েছে ‘প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন সিনথেসিস ইনহিবিটর’ যা বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধে ব্যবহার করা হয়। তাই মাথাব্যথা শুরু হলে সামান্য আদা ছিলে নিয়ে চিবানো শুরু করতে পারেন। এতে মাথাব্যথার দ্রুত উপশম হবে। এর পাশাপাশি এক কাপ পানি ফুটিয়ে এতে আদা সামান্য ছেঁচে নিয়ে ফুটিয়ে ও সামান্য মধু সহযোগেও পান করতে পারেন আদা চা।
আদা কিংবা আদা চা ছাড়াও মাথাব্যথা উপশমে ঘরেই আইসব্যাগ থেরাপি প্রয়োগ করতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন আকারের অনেক আইসব্যাগ কিনতে পাওয়া যায়। এরকম একটি আইসব্যাগে বরফ ভরে নিয়ে তা মাথার তালুতে খানিকক্ষণ ধরে রাখুন। তবে যাদের হুটহাট ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অনুসরণ না করাই শ্রেয়।
এ ছাড়া মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম সালফেট যা মাথাব্যথা উপশমে কাজ করে থাকে। তাই মিষ্টি কুমড়ার বিচি ভাজি করে খেলেও মাথার যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হয়। তরমুজ, দই, পালংশাক ইত্যাদি খাবারও মাথাব্যথা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে থাকে। দেখা যায়, অনেক সময়ই আবহাওয়া বা ধুলোবালির কারণে মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়। আবার অনেক সময় মানসিক চাপের কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। এসব ধরনের ব্যথা কমানোর জন্য এক বা দুই মুঠো কাঠবাদাম চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। কাঠবাদামে রয়েছে ‘স্যালিসিন’ যা ম্যথাব্যথা উপশমে কাজ করে এবং দ্রুত ব্যথা নিরাময় করে।
মন ভালো করার পাশাপাশি মাথাব্যথা উপশমে অন্যতম কার্যকর উপায় হচ্ছে গান শোনা। ‘জার্নাল অব পেইন’র গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়, গান শোনা প্রায় ১৭% মাথাব্যথা কমিয়ে দিতে সহায়তা করে। কারণ মনোযোগ দিয়ে গান শোনার সময় আমাদের লক্ষ্য মাথাব্যথা থেকে সরে যায়, যা আমাদের মাথাব্যথার কথা অনেক সময় ভুলিয়ে দেয়। অনেক সময় রিলাক্সেশন থেরাপির অংশ হিসাবেও এটি কাজ করে থাকে। বায়ো ফিডব্যাক, পেশীর ক্রমপ্রগতিশীল শিথিলতা আনয়ন, আকুপ্রেশার থেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমেও ঘরোয়াভাবে মাথাব্যথার তীব্রতা বেশ খানিকটা কমিয়ে আনা যায়।
যেহেতু মাথাব্যথা জীবনধারা এবং অভ্যাসের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পৃক্ত, তাই মাথাব্যথা প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো জীবনধারায় ছোট ছোট পরিবর্তন নিয়ে আসা। নিয়মিত ঘুম, আহার ও শরীরচর্চা, মাথাব্যথা শুরু করতে পারে এমন সব কিছু এড়িয়ে চলার প্রচেষ্টা করা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, অহেতুক দুশ্চিন্তা ত্যাগ করা ইত্যাদিই হতে পারে মাথাব্যথার বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র।
অসহ্য মাথাব্যথা
মাথাব্যথা অতি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। মাথাব্যথা বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক সমস্যা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মারাত্মক রোগ নির্দেশ করে না। দুশ্চিন্তা ও মাইগ্রেন শতকরা ৯০ ভাগ মাথাব্যথার জন্য দায়ী। মাথাব্যথা নানা কারণে হয়ে থাকে। টেনশন কিংবা দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, ক্লাস্টার, সাইনাস কিংবা চক্ষুজনিত মাথাব্যথা, হরমোনজনিত মাথাব্যথা, ব্রেন টিউমার, মগজের ভেতর রক্তপাত, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
1.মাইগ্রেন
শতকরা ১০-১৫ ভাগ লোক এ ধরনের মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়। মাইগ্রেন মেয়েদের বেশি হয়। সাধারণত ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মাইগ্রেনের লক্ষণ দেখা দেয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাইগ্রেনের আক্রমণের সময় মগজের রাসায়নিক বাহক সেরোটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং মাথা বাইরের ধমনিগুলো প্রসারিত হয়।
লক্ষণগুলো
– মাথাব্যথা সাধারণত মাথার একদিকে হয়। তবে ব্যথা সমস্ত মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
-মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব হয়, এমনকি বমিও হতে পারে।
-রোগী তখন আলো সহ্য করতে পারে না।
-এ ধরনের মাথাব্যথা কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলতে পারে; কিন্তু দিনব্যাপী খুব কম হয়।
-মাইগ্রেন রোজ, সপ্তাহ কিংবা মাসব্যাপী হতে পারে।
-দুশ্চিন্তা, মদ্যপানে মাথাব্যথা বেশি হয়। পনির, চকলেট ইত্যাদি খাবারেও মাথাব্যথা বেশি হয়। ঘুমালে মাথাব্যথা কমে যায়।
-মাইগ্রেনের বংশগত ইতিহাস থাকতে পারে।
-সাধারণত কোনো স্নায়বিক উপসর্গ থাকে না।
-হার্টের অলিন্দে ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে রোগী কোনো ধরনের হার্টের সমস্যা অনুভব নাও করতে পারেন।
চিকিৎসা
যেসব কারণে মাইগ্রেনের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়, তা পরিহার করতে হবে। স্বল্পস্থায়ী চিকিৎসা হিসেবে প্যারাসিটামল, এরগোটামিন, পিজোটিফেন, প্রপ্রানালোল, এমিট্রিপটাইলিন ব্যবহার করা যেতে পারে। হার্টে ছিদ্র আছে কি-না তার জন্য ইকো কালার ডপলার পরীক্ষা করে হার্টের চিকিৎসার দরকার হতে পারে।
2.ক্লাস্টার
ক্লাস্টার মাইগ্রেনের চেয়ে কম হয়। এ ধরনের মাথাব্যথা মধ্যবয়স্ক পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু মাইগ্রেন নারীদের বেশি হয়।
লক্ষণগুলো
-তীব্র যন্ত্রণাদায়ক মাথাব্যথা।
-মাথাব্যথা সাধারণত এক চোখে ও চোখের পেছনে হয় এবং সেদিকের চোখ লাল হয়, পানি পড়ে। নাক দিয়েও পানি পড়ে।
-মাথাব্যথা হঠাৎ করেই হয়ে থাকে। পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ব্যথা সবচেয়ে বেশি হয় এবং আধ ঘণ্টার মধ্যে সেরে যায়।
-মাথাব্যথায় ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
-মদ্যপানে মাথাব্যথা বেশি হয়।
-মাথাব্যথা কয়েক সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী হয় এবং দিনে কয়েকবার করে হয়।
চিকিৎসা
চিকিৎসা হিসেবে উচ্চমাত্রায় এনএসআইডি অথবা এরগোটামিন এবং ভেরাপামিল ব্যবহারে রোগীর সমস্যা কমতে দেখা যায়।
অর্ধেকের বেশি রোগী ফেস মাস্কের মাধ্যমে ১০০ ভাগ অক্সিজেন শ্বাসের সঙ্গে নিয়ে উপকার পায়। এসব রোগীর ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করা উচিত।
3.সাইনাসের মাথাব্যথা
যাদের ঘন ঘন সর্দি-কাশি হয়, তাদের সাইনোসাইটিস থেকে এ ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
লক্ষণগুলো
-ঠাণ্ডা কিংবা সর্দি-কাশি লাগার সময় কিংবা পরে এ ধরনের মাথাব্যথা শুরু হয়।
-ব্যথা মুখমণ্ডলের কিংবা মাথার কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে।
-মাথাব্যথা সকালের দিকে বেশি হয়।
-হাঁচি-কাশি দিলে ব্যথা বেশি হয়। হঠাৎ করে মাথা নাড়লেও ব্যথা বেশি হয়।
-শীতকালে বেশি হয়।
-রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করতে হবে।
চিকিৎসা
চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিস্টমিন, ডিকনজেস্ট্যান্ট কিংবা নাকের স্প্রে দেওয়া হয়।
4.চক্ষুজনিত মাথাব্যথা
শতকরা ৫ ভাগ মাথাব্যথা চোখের কারণে। চোখের দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে মাথাব্যথা হতে পারে। অনেকক্ষণ পড়াশোনা করা, সেলাই করা, সিনেমা দেখা কিংবা কম্পিউটার স্ট্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথাব্যথা হতে পারে। চোখের কোনো রোগ, যেমন- কর্নিয়া, আইরিশের প্রদাহ, গ্লুকোমা এবং রেট্রোবালবার নিউরাইটিস ইত্যাদি কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। চক্ষুজনিত মাথাব্যথা সাধারণত চোখে, কপালের দু’দিকে কিংবা মাথার পেছনে হয়ে থাকে। চক্ষুজনিত মাথাব্যথায় চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
5.হরমোনজনিত মাথাব্যথা
নারীদের মাসিকের সময় হরমোনের ওঠানামার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে মাথাব্যথা হতে পারে। মাসিক চক্র শেষ হলে কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া বন্ধ করলে এ ধরনের মাথাব্যথা ভালো হয়ে যায়।
বিভিন্ন প্রকার মাথাব্যথার কারণ ও প্রতিকার
দৈনন্দিন জীবনে মাথা ব্যথা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। মাথা ব্যথা অনেক বিরক্তিকর, তবে বেশীর ভাগ মাথা ব্যথাই মারাত্মক রোগ নির্দেশ করেনা। দুশ্চিন্তা ও মাইগ্রেন শতকরা ৯০ ভাগ মাথা ব্যথার জন্য দায়ী। মাথা ব্যথা নানা রকমের। টেনশন হেডেক বা দুশ্চিন্তাজনিত মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন হেডেক, ক্লাস্টার হেডেক, সাইনাস হেডেক, আর্জেন্ট হেডেক, আইহেডেক বা চক্ষুজনিত মাথা ব্যথা, হরমোনজনিত মাথা ব্যথা। তাছাড়া মগজের টিউমার, মগজের ঝিল্লির ভিতর রক্তপাত, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি কারণেও মাথা ব্যথা হয়।
১. টেনশন হেডেক বা দুশ্চিন্তাজনিত মাথা ব্যথা
মাথা ব্যথা মাথার উভয় দিকে হয়। মাথায় তীব্র চাপ অনুভূত হয় এবং ব্যথা ঘাড়ে সংক্রমিত হতে পারে।
মানসিক চাপে ব্যথা বাড়তে পারে। পুরুষ, মহিলা সমানভাবে আক্রান্ত হয়।
চিকিত্সা:
সাধারণত বেদনা নাশক দ্বারা চিকিতত্সা করা হয়। স্বল্পমাত্রার ট্র্যাঙ্কুলাইজারও দেওয়া যেতে পারে।
২. মাইগ্রেন-এর মাথা ব্যথা
শতকরা ১০-১৫ ভাগ লোক এ ধরণের মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়। মাইগ্রেন মহিলাদের বেশী হয়। সাধারণত: ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মাইগ্রেনের লক্ষণ দেখা দেয় এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাইগ্রেনের আক্রমণের সময় মগজের রাসায়নিক বাহক সেরোটনিন-এর মাত্রা বেড়ে যায় এবং মাথা বাইরের ধমনীগুলো প্রসারিত হয়।
চিকিতত্সা:
যেসব কারণে মাইগ্রেনের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়, তা পরিহার করতে হবে। স্বল্পস্থায়ী চিকিতত্সা হিসাবে অ্যাসপিরিন বা প্যারাসিটামলের সাথে এন্টিইমেটিক যেমন প্রোক্লোরপেরাজিন, মেটাক্লোপ্র্যামাইড দেয়া যেতে পারে। তীব্র আক্রমণের চিকিত্সা হিসাবে সুমাট্রিপটিন, যা মাথার বাইরের ধমনীকে সংকুচিত করে, তা মুখে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে। আর্গোটামিন বিকল্প হিসাবে দেওয়া যেতে পারে। ঘন ঘন আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধকারী হিসাবে প্রোপানোলল, পিজোটিফেন বা অ্যামিট্রিপটাইলিন দেওয়া যেতে পারে।
৩. ক্লাস্টার হেডেক
ক্লাস্টার হেডেক মাইগ্রেনের চেয়ে কম হয়। এ ধরনের মাথা ব্যথা মধ্য বয়স্ক পুরুষদের বেশী হয়ে থাকে। কিন্তু মাইগ্রেন মহিলাদের বেশী হয়।
চিকিতত্সা:
চিকিত্সা হিসাবে উচ্চ মাত্রায় প্রদাহ বিনাশকারী (এন্টিইনফ্লামেটরী) দেওয়া হয়। সুমাট্রিপটিনও ফলপ্রসূ। আর্গোটামিন ও ভেরাপামিল রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর। অর্ধেকের বেশী রোগী ফেস মাস্কের মাধ্যমে ১০০% অক্সিজেন শ্বাসের সাথে নিয়ে উপকার পায়। ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করা উচিত।
৪. সাইনাস এর মাথা ব্যথা
যাদের ঘন ঘন সর্দি-কাশি হয়, তাদের সাইনুসাইটিস থেকে এ ধরণের মাথা ব্যথা হয়ে থাকে।
চিকিতত্সা:
চিকিতত্সা হিসাবে এন্টিবায়োটিক, এন্টিহিস্টামিন, নাজাল ডিকনেজস্ট্যান্ট বা নাজাল স্প্রে দেওয়া হয়।
৫. চক্ষুজনিত মাথা ব্যথা
শতকরা ৫ ভাগ মাথা ব্যথা চক্ষুজনিত। চোখের দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে মাথা ব্যথা হতে পারে। অনেকক্ষণ পড়াশুনা করা, সেলাই করা, সিনেমা দেখা বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথা ব্যথা হতে পারে। চোখের কোন রোগ যেমন- কর্ণিয়া, আইরিশের প্রদাহ, গ্লুকোমা বা রেট্রোবালবার নিউরাইটিস ইত্যাদি কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। চক্ষুজনিত মাথা ব্যথা সাধারণত: চোখে, কপালের দু’দিকে বা মাথার পিছনে হয়ে থাকে। চক্ষুজনিত মাথা ব্যথায় চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
৬. হরমোনজনিত মাথা ব্যথা
মহিলাদের মাসিক কালীন সময়ে প্রোজেষ্টেরন ও এষ্ট্রোজেন হরমোনের উঠানামার কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলেও মাথা ব্যথা হতে পারে। মাসিক চক্র শেষ হলে বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া বন্ধ করলে এ ধরণের মাথা ব্যথা ভাল হয়ে যায়।