স্তন ক্যানসার কেন হয়?
স্তন ক্যানসার এক ঘাতক ব্যাধি। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগী ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়।স্তন ক্যানসার এখন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নারীদের ক্যানসারের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। যদিও মাত্র দু-এক বছর আগে জরায়ুর ক্যানসার শীর্ষস্থানে অবস্থান করছিল। স্তন ক্যানসার নারীদের কাছে একটি আতংকের নাম। পুরুষের চেয়ে নারীদের স্তন ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে শতভাগ বেশি। আর নারীরা তাদের নিজেদের এই গোপন অঙ্গের রোগগুলো সহজে কারও কাছে বলতে চান না। ফলে তারা স্তন ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।বেশির ভাগ নারী নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে যেসব মায়েরা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান না,তাদের স্তন ক্যানসারে ঝুঁকি বেশি।স্তন ক্যানসারের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। স্তন কিংবা বগলে চাকা বা দলা অনুভব করা, স্তনের কোথাও লালচে ভাব কিংবা ব্যথা অনুভব, গুটি অনুভব করাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। নারীরা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন সবচেয়ে বেশি। এজন্য এক্ষেত্রে নারীদের সচেতন হতে হবে। কারণ একজন সুস্থ মা একজন সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ নারীরা তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না। এছাড়া তারা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না।
রোগটি হলে কোন ডাক্তার দেখাবেন:- Oncologist.
পরিসংখ্যান:-
সারা বিশ্বে 2020 সাল পর্যন্ত প্রায় 2.2 মিলিয়ন লোক স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। আর এই রোগে মারা গেছেন 2020পর্যন্ত প্রায় 6.85 লক্ষ। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আর মারা যান আট হাজারের মতো। আমাদের দেশে ৪০ বছরের পর নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। আমেরিকায় যাদের স্কিন ক্যান্সার হয় তাদের ৯০% পরবর্তীতে স্তন ক্যান্সার হয়.
আসুন স্তন ক্যানসার কেন হয়, এর লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে।
১. প্রথমত এর জন্য দায়ী আমাদের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন। যেমন আজকাল আমরা প্রচুর fast food খাই, সবুজ শাকসবজি খুবই কম খাই, কম শারীরিক পরিশ্রম করি- যার ফলে আমরা অতিরিক্ত স্থূলতায় ভুগছি। অতিরিক্ত স্থূলতা breast Cancer এক অন্যতম প্রধান কারণ।
২. দেরিতে সন্তান নেয়া।
৩. শিশুকে বুকের দুধ দিতে অনীহা বা অপারগতা (যেমন চাকরিজীবী নারীরা এ সমস্যায় ভোগেন বেশি)
৪. বেশি বয়স, গড় আয়ু বেড়ে যাওয়াতে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
৫. বগলে চাকা দেখা দেয়া।
যদি স্তন ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে তাহলে যেখানে ছড়িয়ে পড়েছে তার উপসর্গ দেখা দেয়া যেমন-
১. যকৃতে ছড়ালে পেটে ব্যথা বা জন্ডিস দেখা দেয়।
২. ফুসফুসে ছড়ালে কাশি হওয়া এমনকি কাশির সঙ্গে রক্তও যেতে পারে।
৩. হাড়ে ছড়ালে সেখানে তীব্র ব্যথা হওয়া।
উপসর্গ
১. স্তনে চাকা দেখা দেয়া।
২. স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া বা চামড়া মোটা হওয়া। (কমলালেবুর খোসার মতো)
৩. নিপল বা স্তনের বোঁটা ভেতরে দেবে যাওয়া।
৪. নিপল দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া।
ডায়াগনোসিস বা শনাক্তকরণ পরীক্ষা
প্রথমেই বিশেষজ্ঞরা রোগীর রোগের history নিয়ে থাকেন। শারীরিক পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যানসার শনাক্ত করা হয়। রোগীর বয়সের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখেই বিশেষজ্ঞরা তা দিয়ে থাকেন। যেমন-
১. ম্যামোগ্রাফি * আলট্রাসনোগ্রাফি * এমআরআই * FNAC -চাকা থেকে * বায়োপসি/মাংস পরীক্ষা
চিকিৎসা
২. প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ রোগী সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন। এ ক্যানসারের চিকিৎসা প্রধানত কয়েক ভাগে বিভক্ত-
৩. সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি।
৪. হরমোন থেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি।
সার্জারি
স্তন ক্যানসারের যে কোনো পর্যায়েই রোগীর সার্জারি করা প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারি করা যাবে কিনা বা কী ধরনের সার্জারি হবে তাই প্রাথমিক বিবেচ্য বিষয়। সিদ্ধান্ত নেবেন সার্জন এবং ক্যানসার বিশেষজ্ঞ দুজনে মিলে। অনেক সময় শুধু টিউমার কেটে ফেলা হয়। অনেক সময় পুরো বেস্টই ফেলে দেয়া হয়।
কেমোথেরাপি
প্রায় সব রোগীকেই কেমোথেরাপি নিতে হয়। সার্জারির আগে বা পরে এমনকি রোগ শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়লেও কেমোথেরাপি কাজ করে। যদিও কেমোথেরাপিতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তবুও রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য কেমোথেরাপির বিকল্প নেই। রোগীর শারীরিক অবস্থা, কেমোথেরাপির কার্যকারিতা, রোগীর আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়েই ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা উপযুক্ত পরামর্শ দেন। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাতে কম হয় তারও ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকরা।
রেডিওথেরাপি
বিশেষ ধরনের মেশিনের মাধ্যমে রোগীদের রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়া হয়।
এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সাধারণ কেমোথেরাপির পরই রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। শুধু স্তনে এ নয়, যদি ক্যানসার পড়ে তাহলেও সেখানে রেডিও থেরাপি দিয়ে হাড়ের ভাঙন বা ফ্র্যাকচার রোধ করা যায়।
হরমোন থেরাপি
সব ব্রেস্ট ক্যানসারের রোগীর জন্য হরমোনের দরকার নেই। ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই হরমোনের চিকিৎসা কাদের লাগবে তা শনাক্ত করেন।
টার্গেটেড থেরাপি
এ থেরাপি রোগীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। যেমন- Transtyuumab, Lapatinib, Bevacizumab ইত্যাদি।
করণীয়
ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য Breast Cancer Screening জরুরি। ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে সবারই জানা উচিত এবং এই program-এর আওতায় আসা উচিত। তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়বে এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হবে।
আমাদের সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন হলে (যা ক্যানসার রোগের কারণ) এ রোগের প্রকোপ অনেকাংশেই কমে আসবে এবং আমাদের সমাজে সুস্থ-সুন্দর জীবনের অধিকারী মানুষের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।
কারা স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছেন
বয়স্ক নারী, যাদের স্তন ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস আছে, যেসব নারীরা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাননি BRCA1, BRCA2 নামক জিনের মিউটেশনের কারণে, অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে মাসিক বন্ধ হওয়া, মদ্যপান করলে,স্তনের কিছু অসুখ যেমন atypical ductal বা lobular hyperplasia থাকলে। এছাড়া অন্য কোনো ক্যানসার যেমন- কোলন, ডিম্বাশয়ে ক্যানসার হলে।
DISCLAIMER- আমরা এই আর্টিকলেসটি লিখতে সাহায্য নিয়েছি Google, বিভিন্ন ডাক্তার, Health Newspaper, Youtube, Wikipedia, বিভিন্ন ওয়েবসাইটের। এটি শুধুমাত্র মানুষকে জাগরূক আর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে দেওয়া। যেকোনো রোগের পরামর্শের জন্যে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে যান বা নিজের আসে পাশের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র জানতে ক্লিক করুন এখানে।
কোনো পরামর্শ পেতে Click করুন।
পরবর্তীতে এরকম মূল্যবান তথ্য পেতে WhatsApp এ আমাদের সাথে যুক্ত হন।